‘সংবাদমাধ্যমে স্ব-নিয়ন্ত্রিত কাঠামো গড়ে তোলা সময়ের দাবি’
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা, পেশাগত জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং জনআস্থা ফিরিয়ে আনতে একটি শক্তিশালী ও কার্যকর স্ব-নিয়ন্ত্রিত কাঠামো গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি বলে জানিয়েছেন সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন স্তরের অংশীজনরা।দেশের জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের সাংবাদিক, সম্পাদক, বার্তাকক্ষ ব্যবস্থাপক, ইউনিয়ন ও অ্যাসোসিয়েশনের নেতা, গণমাধ্যম উন্নয়নকর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গত ৮ ও ১৫ নভেম্বর ঢাকায় আয়োজিত তিনটি পরামর্শ সভায় এ বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন।মিডিয়া রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (এমআরডিআই) সভাগুলোর আয়ো...
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা, পেশাগত জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং জনআস্থা ফিরিয়ে আনতে একটি শক্তিশালী ও কার্যকর স্ব-নিয়ন্ত্রিত কাঠামো গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি বলে জানিয়েছেন সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন স্তরের অংশীজনরা।
দেশের জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের সাংবাদিক, সম্পাদক, বার্তাকক্ষ ব্যবস্থাপক, ইউনিয়ন ও অ্যাসোসিয়েশনের নেতা, গণমাধ্যম উন্নয়নকর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গত ৮ ও ১৫ নভেম্বর ঢাকায় আয়োজিত তিনটি পরামর্শ সভায় এ বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন।
মিডিয়া রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (এমআরডিআই) সভাগুলোর আয়োজন করে।
'বাংলাদেশের গণমাধ্যমে স্ব-নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা: আইনি কাঠামো, বৈশ্বিক অনুশীলন ও জবাবদিহির পথনির্দেশনা' শিরোনামে আয়োজিত সভাগুলোতে অংশীজনরা বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন।
বলেন, পক্ষপাতমূলক রিপোর্টিং, ভিন্নমত দমন, মালিকানা কেন্দ্রীকরণ, শাস্তিমূলক আইন, বার্তাকক্ষে নীতিমালার দুর্বল প্রয়োগ এবং সংবাদভোক্তার অভিযোগ নিষ্পত্তির ব্যবস্থার অভাব—এসব কারণে দেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
তাদের মতে, এখনই কার্যকর স্ব-নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে না উঠলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
আলোচকরা মনে করেন, একটি কার্যকর স্ব-নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমকে অযাচিত হস্তক্ষেপ থেকে রক্ষা করতে পারবে।
একইসঙ্গে সংবাদমাধ্যমকেও যেকোনো ভুলের জন্য জবাবদিহি করতে বাধ্য করবে এবং অসত্য, অপতথ্যের যুগে জনগণের অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে জনস্বার্থ রক্ষা করবে।
সভায় বার্তাকক্ষের জ্যেষ্ঠরা কর্মক্ষেত্রে তাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। বলেন, অনেক বছর ধরে সরকার, গণমাধ্যম ও জনগণের মধ্যে এক ধরণের অনাস্থার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।
সরকার ও করপোরেটের চাপে সাংবাদিকদের যেমন আপস করতে হচ্ছে, অন্যদিকে তেমনি জেল-জরিমানার মুখে পড়ছেন বা ভয়ে থাকতে হচ্ছে।
সংবাদমাধ্যমগুলোর অভ্যন্তরে শক্তিশালী জবাবদিহি ব্যবস্থার দাবি জানান তারা। এ জন্য স্বাধীন ন্যায়পাল নিয়োগের সুপারিশ দেন। একইসঙ্গে ন্যায়পালের ক্ষমতা, দায়িত্ব ও সামগ্রিক ম্যান্ডেট নির্ধারণে সুস্পষ্ট নির্দেশিকা প্রণয়নেও জোর দেন।
স্বচ্ছতা নিশ্চিতে মানসম্মত অডিট, বাধ্যতামূলক তথ্য প্রচার এবং সংবাদমাধ্যম ও দর্শক-পাঠকের মধ্যে নিয়মিত উন্মুক্ত আলোচনার দাবি তোলা হয়।
সংবাদমাধ্যমকে নিজস্ব নৈতিক মানদণ্ড প্রণয়ন ও তা অনুসরণসহ মালিক ও সম্পাদকদের জন্যও আচরণবিধির দাবি জানান আলোচকরা।
এ ছাড়া, রাজনৈতিক দলকে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, আইনি সংস্কার এবং সুরক্ষা নিশ্চিতে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ক্ষমতায় যাওয়ার পর ভুলে না যাওয়ার অনুরোধ জানান।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা শুধু সরকারের একার দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে সব অংশীজনদের সমন্বিত ও ধারাবাহিক উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দেন তারা।
এমআরডিআই জানায়, পরামর্শ সভার সুপারিশগুলো পলিসি ব্রিফ হিসেবে সংকলন করবে, যা সংবাদমাধ্যমের জন্য বাস্তবসম্মত, বিশ্বাসযোগ্য ও সমষ্টিগত স্ব-নিয়ন্ত্রণ মডেল উন্নয়নে সহায়তা করবে।
দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় এবং যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের সহায়তায় 'প্রোমোটিং ইফেক্টিভ, রেসপন্সিভ, অ্যান্ড ইনক্লুসিভ গভর্ন্যান্স ইন বাংলাদেশ (পেরি)' কর্মসূচির অধীনে পরামর্শ সভাগুলো আয়োজিত হয়।