দীর্ঘ ২৬ বছরের অচলাবস্থা কাটিয়ে অবশেষে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (শাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক তফসিল ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১৭ ডিসেম্বর এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ১৯৯৭ সালের পর এই প্রথম শাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে।

আজ রোববার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাকসু নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. আবুল মুকিত মোহাম্মদ মোকাদ্দেছ নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ তফসিল ঘোষণা করেন।

নির্বাচন কার্যক্রম শুরু হবে আগামী ২০ নভেম্বর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের মাধ্যমে। এরপর ২২ নভেম্বর ভোটার তালিকা নিয়ে আপত্তি গ্রহণ করা হবে এবং ২৩ নভেম্বর প্রকাশ করা হবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা।

আগ্রহীরা ২৪ নভেম্বর থেকে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হওয়ার পর ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত তা জমা দিতে পারবেন। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ২৭ নভেম্বর এবং প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে ২৮ নভেম্বর।

প্রার্থীদের জন্য মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ধার্য করা হয়েছে ৩০ নভেম্বর। প্রার্থিতা নিয়ে আপিল ও নিষ্পত্তির কাজ শেষ হবে ১ ডিসেম্বর, যার পর ২ ডিসেম্বর প্রকাশ করা হবে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা।

এরপর ১৭ ডিসেম্বর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, 'শাকসু নির্বাচনে ভোট গণনা করা হবে অত্যাধুনিক ওএমআর পদ্ধতিতে। এ ছাড়া, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ভোট গণনার ফলাফল বড় এলইডি স্ক্রিনে প্রদর্শিত হবে।'

এদিকে ১৭ ডিসেম্বর শাকসু নির্বাচনের ঘোষণাকে 'নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা' হিসেবে অভিহিত করেছেন শিক্ষার্থীদের একাংশ। ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে শাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে আজ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস, আপ বাংলাদেশ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী এবং বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা।

তারা বলেন, প্রশাসন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করে 'একটি গোষ্ঠীর চাপে পড়েছে' এবং শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি এড়িয়ে চলছে।

এর আগে গত ১৩ নভেম্বর শাকসু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণায় উপাচার্যের নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলন স্থগিত হলে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন। গভীর রাতে উপাচার্য তাদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে ১০ ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজন করা হবে ঘোষণা দেন।

পরদিন রাতে উপাচার্য এক সংবাদ সম্মেলনে ১৭ ডিসেম্বর শাকসু নির্বাচন হবে বলে ঘোষণা দেন। এতে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আবারও আন্দোলন শুরু করেন। শনিবারের মধ্যে তারিখ পরিবর্তনে উপাচার্যকে আলটিমেটামও দেন।

শাকসু নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ৪ দফা দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। এ লক্ষ্যে উপাচার্য এএম সরওয়ারদ্দিন চৌধুরীর কাছে তারা আজ স্মারকলিপি দিয়েছে।

শাকসু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর যারা এর বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে, তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়াসহ ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির পরিবেশ স্বাভাবিক এবং জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন তারা।