চট্টগ্রামে অপরাধ সংঘটনে টিপ ছুরির ব্যবহার নিয়ে উদ্বিগ্ন পুলিশ
চট্টগ্রামে টিপ ছুরি এখন ব্যাপক আতঙ্কের নাম। ছিনতাই, ডাকাতি ও হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে এ ছুরির ব্যবহার সাম্প্রতিক সময়ে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই এসব ছুরিসহ কিশোর-তরুণ অপরাধীরা ধরা পড়ছেন।পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, সিএমপির ১৬টি থানার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিনই উঠতি বয়সী তরুণ বা অন্যান্য অপরাধীরা টিপ ছুরি সহ গ্রেফতার হচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে এসব ছুরির ব্যবহার বেড়ে চলেছে।সবশেষ এনায়েত বাজার এলাকায় মো...
চট্টগ্রামে টিপ ছুরি এখন ব্যাপক আতঙ্কের নাম। ছিনতাই, ডাকাতি ও হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে এ ছুরির ব্যবহার সাম্প্রতিক সময়ে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই এসব ছুরিসহ কিশোর-তরুণ অপরাধীরা ধরা পড়ছেন।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, সিএমপির ১৬টি থানার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিনই উঠতি বয়সী তরুণ বা অন্যান্য অপরাধীরা টিপ ছুরি সহ গ্রেফতার হচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে এসব ছুরির ব্যবহার বেড়ে চলেছে।
সবশেষ এনায়েত বাজার এলাকায় মোবাইল মেকানিক আকাশ ঘোষকে ছুরি মেরে হত্যার ঘটনায় আবারও টিপ ছুরির ব্যবহার আলোচনায় এসেছে। র্যাব এ ঘটনায় মূল অভিযুক্তসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। পরে নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারের একটি নালা থেকে উদ্ধার করা হয় হত্যায় ব্যবহৃত সিলভার রঙের টিপ ছুরিটি।
পুলিশ জানায়, চায়নায় তৈরি এসব স্টিলের ছুরি সাইজ ভেদে প্রায় ৪০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। কিশোর গ্যাং সদস্যদের মধ্যে বিশেষভাবে এ ছুরির চাহিদা বেশি। কর্মকর্তারা জানান, খুব ধারালো এবং পকেটে ভাজ করে বহনযোগ্য হওয়ায় এটি অপরাধীদের কাছে এখন বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
এ বছরের ১৬ মে হালিশহর থানার নয়াবাজার এলাকায় দুই কিশোর গ্যাংয়ের দ্বন্দ্বে শ্যামলী আইডিয়াল টেকনিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী ওয়াহিদুল হক ওরফে সাব্বির (১৮) খুন হন। পুলিশ জানায়, চারটি অটোরিকশায় এসে 'পাইথন' নামের কিশোর গ্যাংয়ের ২২ সদস্য তাকে পিটিয়ে আহত করেন। গ্যাংটির নেতা হিসেবে পরিচিত মো. আতাউল (২২) সাব্বিরের পেটে ছুরিকাঘাত করেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছয় দিন পর তার মৃত্যু হয়। তদন্তে দুইটি টিপ ছুরি ব্যবহারের তথ্য পাওয়া গেছে।
নগরীর বিভিন্ন ফুটপাতের দোকান থেকে শুরু করে নামী মার্কেট ও অনলাইনে প্রকাশ্যেই এসব ছুরি বিক্রি হচ্ছে। ফলে ব্যবহারের হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা। চীনে তৈরি এসব ছুরি একপাশে ধারালো থাকে এবং আঘাত বা প্রতিঘাতের উপযুক্ত করেই নকশা করা। আগে এগুলো মূলত সৌখিনতার সামগ্রী বা কমান্ডো নাইফ নামে বিক্রি হতো।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চাকরিগত প্রয়োজনে এবং ট্রাভেল গ্রুপের সদস্যরা ক্যাম্পিংয়ে এগুলো ব্যবহার করেন বলেও কর্মকর্তারা জানান।
রিয়াজউদ্দিন বাজারসহ আশপাশের ফুটপাতের দোকানগুলোতে সহজেই পাওয়া যাচ্ছে ছুরিগুলো। কয়েকটি থানা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৪-৫ বছর ধরে শহর থেকে গ্রাম সবখানেই টিপ ছুরি ব্যবহার করে বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। ২০২২ সালে নগর পুলিশ প্রকাশ্যে বিক্রি নিষিদ্ধে কড়াকড়ি করলেও সময়ের সঙ্গে আবারও বিক্রি বেড়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের এক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটি পরিবহন অনেক সময় অপরাধ হিসেবে গণ্য হয় না। কোনো কলেজ ছাত্রের কাছে পেলে যাচাই-বাছাই করে ছুরি রেখে দেওয়া হয়। পরে তাদের পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
তিনি আরও জানান, এগুলো বাইরের দেশ থেকে আসে। তবে কী নামে আমদানি হয়, কীভাবে খালাস হয়, কারা আমদানি করে, কাস্টমস কীভাবে ছাড় দেয় বা কারা কিনছে তার সুস্পষ্ট ডাটাবেজ থাকা দরকার।
সাব্বির হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হালিশহর থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক স্বপন কুমার সরকার বলেন, 'হত্যাকাণ্ডে দুইটি টিপ ছুরির ব্যবহার পেয়েছি আমরা তদন্তে। মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজন এজাহারনামীয়সহ ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।'
পুলিশের আরও তথ্য বলছে, ৪ নভেম্বর কোতোয়ালী থানায় দুই কিশোর ছিনতাইকারীকে টিপ ছুরি সহ গ্রেফতার করা হয়। পরদিন ডিবি পুলিশের হাতে আরও আট ছিনতাইকারী গ্রেফতার হন; তাদের কাছ থেকেও দুইটি ধারালো টিপ ছুরি উদ্ধার করা হয়। আকবরশাহ থানায় ২৫ অক্টোবর চাঁদাবাজির অভিযোগে কিরিচ আজাদ নামে একজন টিপ ছুরি সহ ধরা পড়েন।
পাহাড়তলী থানায় ২১ জুলাই ডাকাত সন্দেহে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ধারালো অস্ত্রের পাশাপাশি আরও দুইটি টিপ ছুরি জব্দ করা হয়।
২০১৮ সালের ১৬ জুন হালিশহরের আর্টিলারি রোডে কিশোর মো. সুমন হত্যা, চট্টেশ্বরীতে যুবলীগ কর্মীদের হাতে আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে আবু জাফর অনিক (২৬) খুন এবং চট্টেশ্বরী রোডে আইমান জিহাদ নামে এক যুবকের ওপর ছুরি দিয়ে আঘাত এই সবকটি ঘটনাতেই একই ধরনের ছুরির ব্যবহার পাওয়া যায় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আলমগীর হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই ধরনের টিপ ছুরির ব্যবহার অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু দেশীয় আইনেও এটি নিষিদ্ধ নয়। এগুলোর মাল্টিপল ব্যবহার হয়। এখন অপরাধীরা এর মিসইউজ করছে বলেই সমস্যা।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা এগুলো আরও কীভাবে মনিটরিং করা যায় সেটা চিন্তা করছি। যারা এগুলো বিক্রি করছেন তাদেরও কীভাবে মনিটর করা যায়, সেটি বের করতে হবে।'