জবাবদিহিতার জন্য স্বাধীন পুলিশ কমিশন অপরিহার্য: মতিউর রহমান
জনবান্ধব ও জবাবদিহিমূলক পুলিশ বাহিনী গড়ে তোলার জন্য রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য।'বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রথম আলোর সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমান এ মন্তব্য করেন।আজ শনিবার সকাল ১১টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে এই গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মতিউর রহমান বলেন, 'জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে আমরা পুলিশের সাহায্যের জন্য যাই। অনেক সময় তারা সহায়তা করে, তবে কিছ...
জনবান্ধব ও জবাবদিহিমূলক পুলিশ বাহিনী গড়ে তোলার জন্য রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য।
'বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রথম আলোর সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমান এ মন্তব্য করেন।
আজ শনিবার সকাল ১১টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে এই গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
মতিউর রহমান বলেন, 'জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে আমরা পুলিশের সাহায্যের জন্য যাই। অনেক সময় তারা সহায়তা করে, তবে কিছু ক্ষেত্রে তারা কাঠামোগত, রাজনৈতিক বা জবাবদিহি সীমাবদ্ধতার কারণে ব্যর্থ হয়।'
তিনি স্বীকার করেন, যদিও পুলিশ প্রায়ই জনসমালোচনার মুখোমুখি হয়, তবুও তারা ব্যক্তিগত, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংকটের সময় তাৎক্ষণিক সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রথম আলো সম্পাদকের পর্যবেক্ষণ, আশির দশক থেকে বিভিন্ন সংস্কার উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগই ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারেনি।
তিনি বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে অর্থবহ সংস্কারের জন্য একটি বাস্তব সুযোগ রয়েছে, যেখানে পুলিশ বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান সদস্যরা সক্রিয়ভাবে নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সংস্কারের প্রস্তাবনা তৈরি করছেন।
আগের পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশের কথা টেনে মতিউর রহমান বলেন, ওই কমিশন একশর বেশি প্রস্তাবনা তৈরি করেছিল, যার মধ্যে ১৮টি প্রস্তাবনাকে তাৎক্ষণিক বাস্তবায়নযোগ্য মনে করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, 'সেগুলোর মধ্যে ১১টি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।'
বাস্তবায়ন করা হয়েছে এমন উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে, মানবাধিকার অভিযোগের জন্য একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত সেল তৈরি করা, গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে আপিল বিভাগের নির্দেশনা কার্যকর করা, রাতের তল্লাশির সময় একজন ম্যাজিস্ট্রেট বা স্থানীয় ব্যক্তির উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং মামলা দায়ের ও তদন্তে সার্কেল অফিসার এবং সুপারিনটেনডেন্টদের তদারকি বাড়ানো।
তবে বেশ কয়েকটি সুপারিশ এখনও কার্যকর করা হয়নি। যেমন স্বচ্ছ জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষ স্থাপন, কারা পরিস্থিতি উন্নত করা, নারীদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় নারী কর্মকর্তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং সব থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের বাধ্যতামূলক করা।
মতিউর রহমান একটি প্রধান অবাস্তবায়িত প্রস্তাবও তুলে ধরেন। সেটি হলো— আদালতের আদেশ ছাড়া এফআইআর-বিহীন অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার নিষিদ্ধ করা।
তিনি বলেন, পুলিশ কর্তৃপক্ষ এটিকে 'অবাস্তব' বলে মনে করেছে, কারণ মামলা দায়েরের সময় সব সন্দেহভাজনের নাম জানা যায় না।
রাজনীতিমুক্তকরণের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, আমরা সবাই এমন একটি পুলিশ বাহিনী চাই, যা রাজনৈতিক স্বার্থ নয়, বরং জনগণের সেবা করবে। নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলি রাজনৈতিক আনুগত্যের ভিত্তিতে নয়, যোগ্যতা ও সততার ভিত্তিতে হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশন জাতীয় ঐকমত্য পেলেও এর স্বায়ত্তশাসন নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, কমিশন নীতি প্রস্তাবনা তৈরি করবে। তবে নিয়োগ, পদোন্নতি বা বদলির ওপর কর্তৃত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনেই থাকবে।
প্রথম আলো সম্পাদক বলেন, সেক্ষেত্রে কমিশনের কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যদি সিলেকশন কমিটির নেতৃত্ব দেন, তাহলে 'রাজনৈতিক প্রভাব' অব্যাহত থাকবে।