গাজীপুরে সাফারি পার্ক থেকে লেমুর চুরি, ‘পাচারচক্রের’ ৬ সদস্য গ্রেপ্তার
গাজীপুরে সাফারি পার্ক থেকে বিরল প্রজাতির লেমুর চুরির ঘটনায় 'আন্তর্জাতিক প্রাণী পাচারচক্রের' ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।এর আগে গত মঙ্গলবার দুপুরে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার কালাইপাড়া এলাকায় স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় অভিযান চালিয়ে মজনু মিয়াকে (৫৫) গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ওই এলাকার বাসিন্দা।সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, গ্রেপ্তার মজনু আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক 'জবানবন্দি' দিয়েছেন। তিনি 'আন্তর্জাতিক প্রাণী পাচারচক্রের' সদস্য।তা...
গাজীপুরে সাফারি পার্ক থেকে বিরল প্রজাতির লেমুর চুরির ঘটনায় 'আন্তর্জাতিক প্রাণী পাচারচক্রের' ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।
এর আগে গত মঙ্গলবার দুপুরে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার কালাইপাড়া এলাকায় স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় অভিযান চালিয়ে মজনু মিয়াকে (৫৫) গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ওই এলাকার বাসিন্দা।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, গ্রেপ্তার মজনু আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক 'জবানবন্দি' দিয়েছেন। তিনি 'আন্তর্জাতিক প্রাণী পাচারচক্রের' সদস্য।
তারও আগে গত ১৯ এপ্রিল নিপেন মাহমুদ (৩৩) নামে ওই চক্রের একজনকে গ্রেপ্তার করে শ্রীপুর পুলিশ। চক্রটি গাজীপুর সাফারি পার্ক থেকে চুরি করা বিরল এ প্রাণীগুলো বিদেশে পাচার করে আসছিল বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
গ্রেপ্তার অন্য সদস্যরা হলেন—জুয়েল মিয়া (৪২), ইসমাইল হোসেন হৃদয় (২৬), দেলোয়ার হোসেন তাওসীফ (২২) এবং সাব্বির হোসেন তপন (২৬)।
অভিযানে চুরিতে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল জব্দ এবং চুরি যাওয়া তিনটি লেমুরের মধ্যে একটি উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি দুটি উদ্ধারে অভিযান চলছে বলে সিআইডি জানিয়েছে।
মামলার তদন্তের বিষয়ে সিআইডির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৩ মার্চ রাতে চোরেরা পার্কের নিরাপত্তা বেষ্টনী কেটে তিনটি রিং-টেইলড লেমুর (দুটি পুরুষ ও একটি স্ত্রী) চুরি করে নিয়ে যায়। প্রাণীগুলোর আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় তিন লাখ টাকা।
ঘটনার পরদিন পার্কের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের মাধ্যমে বিষয়টি জানা গেলে কর্তৃপক্ষ শ্রীপুর থানায় মামলা দায়ের করে।
২০১৮ সালে মাদাগাস্কার থেকে দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ৮৬ জোড়া প্রাণীর সঙ্গে রিং-টেইলড লেমুর বাংলাদেশে আমদানি করে, যা পরবর্তীতে সাফারি পার্কে হস্তান্তর করা হয়। সেখানে লেমুর দুটি আরও দুটি বাচ্চার জন্ম হয়। পরে একটি মারা গেলে পার্কে তিনটি লেমুর ছিল।
তদন্তে জানা গেছে, পার্কে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কর্মরত নিপেল মাহমুদ (৩৩) বিভিন্ন সময় বিরল প্রাণীর ছবি ও ভিডিও ফেসবুকের প্রাইভেট গ্রুপে পোস্ট করে বিদেশি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতেন। পরে ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী প্রাণীগুলো চুরি করে বিক্রি করতেন।
চক্রটির সদস্যরা তিনটি লেমুরের মধ্যে একটি ৫ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে অর্থ ভাগাভাগি করেন। বাকি দুটি লেমুর ৭ লাখ টাকায় ভারতীয় ক্রেতাদের কাছে বিক্রির চেষ্টা চলছিল। সেই প্রক্রিয়ায় মজনু মিয়া প্রাণীগুলো প্যাকেট ও হস্তান্তরে সহযোগিতা করেন।
সিআইডির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, এই চক্রটি দেশের বিপন্ন প্রাণীগুলো সীমান্ত পেরিয়ে বিদেশে পাচার করত। তাদের সঙ্গে আরও বড় আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেট জড়িত থাকতে পারে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বর্তমানে মামলাটির তদন্ত সিআইডির গাজীপুর জেলা ও মেট্রো বিভাগ যৌথভাবে পরিচালনা করছে। অন্য আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
রিং-টেইলড লেমুর মাদাগাস্কারের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিপন্ন তালিকাভুক্ত প্রাণী। আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ চুক্তি অনুযায়ী এ প্রজাতির বাণিজ্য, সংরক্ষণ বা রপ্তানি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন, ২০১২ অনুযায়ীও এদের শিকার, বিক্রি বা পাচার শাস্তিযোগ্য অপরাধ।