প্রাথমিকে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক পদ বাতিলের প্রতিবাদে গানের মিছিল
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক পদ বাতিলের প্রতিবাদে গানের মিছিল হয়েছে।আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আবাহনী মাঠের সামনে 'শিক্ষার্থী-সঙ্গীতশিল্পী ও সঙ্গীত অনুরাগী সচেতন নাগরিকবৃন্দ'-এর ব্যানারে এই মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।আয়োজকরা বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, তথাকথিত ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলোর চাপের মুখে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত এবং শারীরিক শিক্ষা বিষয়ক শিক্ষক পদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এটি শুধু শিশুদের সৃজনশীল ও মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে...
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক পদ বাতিলের প্রতিবাদে গানের মিছিল হয়েছে।
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আবাহনী মাঠের সামনে 'শিক্ষার্থী-সঙ্গীতশিল্পী ও সঙ্গীত অনুরাগী সচেতন নাগরিকবৃন্দ'-এর ব্যানারে এই মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
আয়োজকরা বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, তথাকথিত ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলোর চাপের মুখে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত এবং শারীরিক শিক্ষা বিষয়ক শিক্ষক পদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এটি শুধু শিশুদের সৃজনশীল ও মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে না, বরং বাংলাদেশের বহুমাত্রিক সামাজিক চরিত্র, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং মুক্তচিন্তার মূল্যবোধের ওপর সরাসরি আঘাত হানছে। এটিকে আমরা 'মতাদর্শিক আধিপত্যের মাধ্যমে অপরাপর জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতি নিশ্চিহ্নকরণ'—এই ফ্রেমেই দেখি।
'সংগীত এবং শারীরিক শিক্ষা শিশুদের সৃজনশীলতা, আবেগীয় বোধ, সামাজিক সংহতি ও নান্দনিক বোধ গঠনের জন্য অপরিহার্য। বিশ্বের নানা দেশ শিক্ষা ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে শিল্প-সংস্কৃতি ও সৃজনশীল শিক্ষাকে রাখছে। আমাদের দেশে এগুলো সংকুচিত করা শিক্ষানীতি ও জাতির ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিকর। আমরা এও দেখেছি যেকোনো প্রকার গণআন্দোলনে সংগীত আমাদের কেমন করে আন্দোলিত করেছে। যখন কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর চাপে সংস্কৃতি ও শিক্ষার ক্ষেত্র সংকুচিত করা হয়, তখন সেটি কেবল প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে আটকে থাকে না, হয়ে ওঠে ইতিহাসে দেখা সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদের এক বিপজ্জনক পুনরাবৃত্তি।'
আয়োজকরা আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট শক্তিগুলো সবসময়ই সমাজকে একমাত্রিক করতে, শিল্প-সাহিত্য সৃজনশীলতাকে দমন করতে এবং ভিন্ন মতামত ও নান্দনিক চেতনার পরিবর্তে একরৈখিক মতাদর্শ চাপিয়ে দিতে চায়। বাংলাদেশ বহুত্ববাদ, সাংস্কৃতিক অসাম্প্রদায়িকতা ও মানবিকতার ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এই ভিত্তি আঘাতের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য এখন শিক্ষা খাত। তাই এই সিদ্ধান্তকে শুধুমাত্র শিক্ষা নীতিগত সংকোচন নয়, বৈচিত্র্য ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট প্রবণতা হিসেবে দেখাই যথার্থ।
'কোনো বিশেষ গোষ্ঠী কিংবা তথাকথিত ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে মাথা নত করা মানে রাষ্ট্রের শিক্ষানীতি একক মতাদর্শের হাতে সমর্পণ করা। শিক্ষা ব্যবস্থায় কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর আধিপত্য বাংলাদেশের বহুত্ববাদী সমাজের জন্য বিপজ্জনক।'
আয়োজকরা মিছিল থেকে তিনটি দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হলো—
১। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা শিক্ষক পদ পুনর্বহাল করতে হবে ও কোনো নির্দিষ্ট এজেন্ডার কারণে শিক্ষানীতির এরূপ পরিবর্তন বন্ধ করতে হবে।
২। শিশুদের সার্বিক বিকাশে শিল্প-সংস্কৃতি ও সৃজনশীল শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং শিক্ষানীতি নির্ধারণে বিশেষ গোষ্ঠীর চাপ নয়, রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধ ও শিক্ষাবিদ ও সংস্কৃতি-মননশীল সমাজের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে।
৩। শিক্ষা ও সংস্কৃতির গুরুত্বকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং শিক্ষাজীবনের বিনিয়োগের ক্ষতি রোধ করতে উপযুক্ত কর্মসংস্থান বা সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।