রাজশাহীর গোদাগাড়ীর বাবুডায়িং গ্রামে কোল সম্প্রদায়ের পাঁচ পরিবারের ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়ার পর তারা আশ্রয় নিয়েছেন বাঁশঝাড়ে। 

তারা তাদের পূর্বপুরুষের ভিটা ছাড়তে রাজি নন। তবে, তাদের পুনর্বাসনের জন্য খাস জমির খোঁজ করছে স্থানীয় প্রশাসন।

গত সোমবার বিকেলে বাবু ডায়িং গ্রামে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে সনাতন সরেন, সুজন সরেন, ভুতু কিসকু, ভরত টুডু ও শনিলাল টুডুর বাড়িগুলো গুঁড়িয়ে দেয় প্রশাসন।

এক্সক্যাভেটর দিয়ে তাদের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর তারা ঘরের সামান্য কিছু মালামাল রক্ষা করতে পারেন এবং এগুলো নিয়ে তারা পার্শ্ববর্তী একটি বাঁশঝাড়ে আশ্রয় নেন।

ভুক্তভোগীরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ১৯৯৮ সাল থেকে তারা এই জায়গায় বসবাস করছিলেন। তাদের ধারণা ছিল, জমিটি সরকারি খাসজমি। 

পরে তারা জানতে পারেন, ৭৭ শতাংশ জমি তাদের সম্প্রদায়ের তিনজনের নামে রেকর্ডভুক্ত ছিল, যারা এখন আর ওই এলাকায় থাকেন না। 

অভিযোগ আছে, ওই জমির আসল মালিকদের হিন্দু দেখিয়ে স্থানীয় মকবুল হোসেন পরবর্তীতে ওই জমিটি নিজের নামে নিবন্ধন করেন।

মকবুল হোসেন মারা যাওয়ার পর তার উত্তরাধিকারী চাঁপাইনবাবগঞ্জের আলমগীর কবির ও আরও কয়েকজন জমির মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করেন। 

দরিদ্র কোল পরিবারগুলো আইনজীবী নিয়োগ করতে না পারায় তারা মামলায় হেরে যায় এবং আদালত আলমগীর কবিরের পরিবারের পক্ষে রায় দেন। 

পরে পুলিশ ও আদালতের কর্মকর্তারা রায় বাস্তবায়ন করে উচ্ছেদ অভিযান চালান।

সনাতন টুডু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি দরজায় দাঁড়িয়ে তাদের থামানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পুলিশ বলেছিল, সরকারি আদেশ আছে, বাধা দিও না। তারপর আমাকে সরিয়ে দেয়।'

'জিনিসপত্র সরানোর জন্য আধাঘণ্টা সময় দেওয়া হয়নি,' বলেন তিনি।

আরেক ভুক্তভোগী সুজন সরেন বলেন, 'কিছু দরকারি জিনিস কোনোভাবে বাঁচাতে পেরেছি। এখন সেগুলো নিয়ে বাঁশঝাড়ে এসেছি। আমাদের যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই। এখানেই থাকব।'

এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), সেন্টার ফর ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ফর ভলান্টারি অর্গানাইজেশন (সিসিবিভিও) এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবাধিকারকর্মীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা এ উচ্ছেদ অভিযানকে 'অমানবিক' বলে উল্লেখ করেন।

সিসিবিভিও সমন্বয়কারী আরিফ ইথার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জমিটি মূলত কোল সম্প্রদায়ের ছিল। কিন্তু আদিবাসীদের জমি হস্তান্তরের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় জমির মালিকদের হিন্দু দেখিয়ে বাঙালি নাম ব্যবহার করে রেকর্ড করা হয়।'

ব্লাস্ট রাজশাহী সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট সামিনা বেগম বলেন, 'আমরা জমির সব নথি সংগ্রহ করছি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য আইনগত সহায়তা দেবো।'

মামলার বাদী আলমগীর কবির সাংবাদিকদের বলেন, 'এই জমি কিনেছিলেন আমার দাদা মকবুল হোসেন। তিনি কীভাবে এটা কিনেছিলেন তা তো আমরা বলতে পারব না। তবে এটা রেকর্ড করা সম্পত্তি। তারপরও আদিবাসীরা জমি ছাড়েনি। বাধ্য হয়ে আমরা আইনের আশ্রয় নিয়ে তাদের উচ্ছেদ করেছি। জমি এখন আমাদের দখলে।'

জানতে চাইলে গোদাগাড়ীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পরিবারগুলো এখনো বাঁশঝাড়েই অবস্থান করছে। আদালতের নির্দেশে তাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে।'

'মানবিক বিবেচনায় আমরা তাদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারি জমি খুঁজছি। তাদের জন্য ঘর নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে,' বলেন তিনি।