তথ্য মন্ত্রণালয়ের খসড়া অধ্যাদেশে নেই স্বাধীন গণমাধ্যম কমিশন
গণমাধ্যম সংস্কারের দায়িত্বে থাকা কমিশন দুটি আইনের রূপরেখা তৈরি করেছিল। এর মধ্যে একটি হলো বাংলাদেশ গণমাধ্যম কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫। আরেকটি হলো সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫। তবে তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রণয়ন করা খসড়া অধ্যাদেশ থেকে প্রস্তাবিত স্বাধীন গণমাধ্যম কমিশন গঠনসহ কিছু বিষয় বাদ পড়েছে।প্রধান উপদেষ্টার কাছে সংস্কার কমিশনের জমা দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয় সব ধরনের গণমাধ্যমকে একটি ঐক্যবদ্ধ, স্বাধীন তত্ত্বাবধানকারী সংস্থার অধীনে নিয়ে আসার জন্য।মুদ্রণ ও সংবাদ সংস্থাগুলোর জন্য...
গণমাধ্যম সংস্কারের দায়িত্বে থাকা কমিশন দুটি আইনের রূপরেখা তৈরি করেছিল। এর মধ্যে একটি হলো বাংলাদেশ গণমাধ্যম কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫। আরেকটি হলো সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫। তবে তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রণয়ন করা খসড়া অধ্যাদেশ থেকে প্রস্তাবিত স্বাধীন গণমাধ্যম কমিশন গঠনসহ কিছু বিষয় বাদ পড়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার কাছে সংস্কার কমিশনের জমা দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয় সব ধরনের গণমাধ্যমকে একটি ঐক্যবদ্ধ, স্বাধীন তত্ত্বাবধানকারী সংস্থার অধীনে নিয়ে আসার জন্য।
মুদ্রণ ও সংবাদ সংস্থাগুলোর জন্য বিদ্যমান প্রেস কাউন্সিল এবং ইলেকট্রনিক ও অনলাইন গণমাধ্যমের জন্য সম্প্রচার কমিশনের সমন্বয়ে বাংলাদেশ গণমাধ্যম কমিশন গঠন করা যেতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সংস্থাটি সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হওয়া উচিত। গণমাধ্যমের স্বনিয়ন্ত্রণের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেসব পদ্ধতি ও প্রতিষ্ঠান কার্যকর ভূমিকা রাখছে, তার অভিজ্ঞতার আলোকেই এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা দরকার।
ভারতে ব্যবহৃত মডেলের মতো সংস্থাটিকে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে গণমাধ্যম থেকে কর নেওয়া যেতে পারে। এতে আরও বলা হয়েছে যে সরকারি অনুদানও নেওয়া যেতে পারে, যদি তা হয় নিঃশর্ত।
প্রস্তাব অনুযায়ী, স্বাধীন গণমাধ্যম কমিশন দণ্ডিত অপরাধী ও ঋণ খেলাপিদের সংবাদমাধ্যমের মালিকানা বা পরিচালনা থেকে বিরত রাখবে। এটি সাংবাদিকদের জন্য নৈতিক নির্দেশিকা প্রণয়ন এবং প্রয়োগের তদারকি করবে, পেশায় প্রবেশের জন্য ন্যূনতম শিক্ষাগত মানদণ্ড নির্ধারণ করবে, কর্মরত সাংবাদিকদের একটি জাতীয় ডাটাবেস সংরক্ষণ করবে এবং সম্প্রচার ও অনলাইন মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের লাইসেন্স নিয়ন্ত্রণ করবে।
বর্তমানে গণমাধ্যমের লাইসেন্স প্রদান ও নিয়ন্ত্রণের সম্পূর্ণ ক্ষমতা তথ্য মন্ত্রণালয়ের হাতে, এবং গণমাধ্যমের মালিকানার ওপরও মন্ত্রণালয়টির পূর্ণ কর্তৃত্ব রয়েছে।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, বিদ্যমান আকারে প্রেস কাউন্সিলকে বিলুপ্ত করে তার পরিবর্তে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা প্রয়োজন—যাতে গণমাধ্যম খাতের নানামুখী সংকট মোকাবিলা করা যায় এবং সাংবাদিকদের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে অপব্যবহার রোধ করা সম্ভব হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্বাধীনভাবে কাজ করতে বাধাপ্রাপ্ত বা নিয়োগকর্তার বাধার মুখে পড়া সাংবাদিকরা প্রস্তাবিত স্বাধীন গণমাধ্যম কমিশনের মাধ্যমে প্রতিকার চাইতে পারবেন। কমিশন অভিযোগ তদন্ত করবে, বিরোধ নিষ্পত্তি করবে এবং যেসব ক্ষেত্রে ফৌজদারি অপরাধ জড়িত থাকবে, সেসব ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের পক্ষে আইনি পদক্ষেপ নেবে।
তবে তথ্য মন্ত্রণালয় প্রণীত খসড়া অধ্যাদেশে এসব প্রস্তাব বাদ দেওয়া হয়েছে। এই খসড়া অধ্যাদেশের একটি অনুলিপি দ্য ডেইলি স্টারের হাতে এসেছে।
যোগাযোগ করা হলে তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, স্বাধীন এই কমিশন গঠনের বিষয়টি এখনো অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনাধীন এবং খসড়া অধ্যাদেশটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের খসড়া অধ্যাদেশে সাংবাদিকদের অধিকার সুরক্ষার লক্ষ্যে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারাও বাদ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি ধারায় সাংবাদিকদের গোপনীয়তার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছিল এবং তাদের বাসস্থানে অবৈধভাবে প্রবেশ বা সম্পত্তি জব্দের মতো বেআইনি কাজ প্রতিরোধের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল।
এ ছাড়া খসড়ায় বাদ দেওয়া হয়েছে সেই ধারা, যেখানে সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ বা হয়রানির জন্য এক লাখ টাকা জরিমানা ও পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের প্রস্তাব ছিল। এর পরিবর্তে সেখানে 'দণ্ডবিধির সংশ্লিষ্ট ধারা'র কথা বলা হয়েছে।
খসড়া থেকে বাদ পড়া আরেকটি ধারায় উল্লেখ ছিল- ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কিংবা রাষ্ট্রীয় সংস্থার সহিংসতা, জবরদস্তি বা ভয়ভীতি থেকে সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব।
এ বিষয়ে দ্য ডেইলি স্টার যোগাযোগ করলে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আলতাফ-উল-আলম বলেন, 'এখনও কিছুই চূড়ান্ত হয়নি।' তিনি এ নিয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।