আড়াই লাখ মানুষের ভরসা যখন ৪ চিকিৎসক
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি আড়াই লাখ মানুষের প্রধান ভরসা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই ৩১ শয্যার হাসপাতালটি চিকিৎসকসহ প্রয়োজনীয় জনবল সংকটে ভুগছে। নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামাদিও। এতে উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালটির জন্য বরাদ্দকৃত ১০টি অনুমোদিত চিকিৎসক পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ৪ জন চিকিৎসক। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের একমাত্র এক্স-রে মেশিনটিও অকার্যকর। নির্ধারিত ৩টি অ্যাম্বুলেন্সের বিপরীতে চালু আছে মাত্র একটি। হাসপাতালটিতে নেই পর্যাপ্ত ম...
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি আড়াই লাখ মানুষের প্রধান ভরসা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই ৩১ শয্যার হাসপাতালটি চিকিৎসকসহ প্রয়োজনীয় জনবল সংকটে ভুগছে। নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামাদিও। এতে উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
হাসপাতালটির জন্য বরাদ্দকৃত ১০টি অনুমোদিত চিকিৎসক পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ৪ জন চিকিৎসক। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের একমাত্র এক্স-রে মেশিনটিও অকার্যকর। নির্ধারিত ৩টি অ্যাম্বুলেন্সের বিপরীতে চালু আছে মাত্র একটি। হাসপাতালটিতে নেই পর্যাপ্ত মেডিকেল টেকনোলজিস্টও।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এইসব শূন্যতায় তাদের মৌলিক চিকিৎসা-প্রাপ্তি এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। পরবর্তীতে এটিকে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে উন্নীত করা হয়। বর্তমান সময়ে এসে যেখানে হাসপাতালের জনবল ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদি বৃদ্ধি পাওয়ার কথা সেখানে হাসপাতালটি দীর্ঘদিন ধরেই ধুঁকছে।
হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন দীর্ঘদিন ধরে অকার্যকর থাকায় রোগীদের বেসরকারি হাসপাতালে যেতে হচ্ছে, যেখানে চিকিৎসা খরচ কয়েকগুণ বেশি।
হাসপাতালে বরাদ্দকৃত ১০টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে মাত্র ৪ জন চিকিৎসক কর্মরত আছেন। জুনিয়র কনসালট্যান্ট মেডিসিন ও সার্জারি বিশেষজ্ঞের দুটি পদই এখন শূন্য। হাসপাতালে নেই কোনো অ্যানেস্থেসিওলজিস্টও।
অন্যদিকে, হাসপাতালে ৫ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পদ বরাদ্দ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র একজন। চারটি পদই এখন ফাঁকা। ফলে হাসপাতালে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখাও ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় বাসিন্দা সুখন রায় বলেন, 'আমার স্ত্রী বেশ কয়েকদিন ধরে অসুস্থ, কিন্তু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার না থাকায় বেশ কয়েকবার চিকিৎসা ছাড়াই ফিরে আসতে হয়েছে।'
হাসপাতালে আসা রোগী শাহানা বেগম বলেন, 'আমরা বিনামূল্যে চিকিৎসা পাওয়ার জন্য এখানে আসি। কিন্তু এখানে বলতে গেলে কিছুই নেই। এমনকি মৌলিক পরীক্ষা-নিরীক্ষাও হয় না।'
হাসপাতালে কর্মরত জ্যেষ্ঠ নার্স শেলি আক্তার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মীর তীব্র ঘাটতির মধ্যেই আমাদের প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক রোগী সামলাতে হচ্ছে। সম্প্রতি ৫ জন নার্সকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে, এতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।'
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার উৎপল দাস বলেন, 'প্রতিদিন হাসপাতালের বহির্বিভাগে আমরা প্রায় ৪৫০ জন রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি। সঠিকভাবে হাসপাতাল পরিচালনার জন্য অন্তত ১৪ জন ডাক্তারের প্রয়োজন।'
জনবল সংকট ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ঘাটতির বিষয়ে জানতে চাইলে মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন মো. মামুনুর রহমান বলেন, 'আমি হাসপাতালটির পরিস্থিতি সম্পর্কে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। হাসপাতালের চিকিৎসার মান উন্নত করতে শিগগির নতুন নিয়োগ হবে বলে আশা করছি।'