'নীতি প্রণয়ন করা সচিবদের কাজ নয়। রাজনীতিবিদরা নীতি প্রণয়ন করবেন এবং সচিবসহ সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব হবে তা বাস্তবায়ন করা।'

আজ শনিবার বিকেলে ফরিদপুর সদর উপজেলা অডিটোরিয়ামে বিএনপির ফরিদপুর সাংগঠনিক বিভাগের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'কাজ বাস্তবায়নে সীমাহীন সময় দেওয়া হবে না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ করতে না পারলে কাউকে ওই পদে থাকার প্রয়োজন নেই।'

আমির খসরু বলেন, 'যেখানে যত নিয়ন্ত্রণ, সেখানে তত দুর্নীতি। ঘুষ–দুর্নীতি কমিয়ে ব্যবসা সহজ করতে সনদের সংখ্যা কমিয়ে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা হবে। ব্যাংক ঋণের হার ১৫ শতাংশ হলে ব্যবসা করা সম্ভব না।'

তিনি বলেন, 'আগামীতে অর্থনীতি ও রাজনীতিকে নতুনভাবে সাজানো হবে। আমরা জনগণকে ক্ষমতায় দেখতে চাই, সরকারকে নয়। শাসকের হাতে সব ক্ষমতা থাকলে দেশ পিছিয়ে পড়ে।'

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, 'আগের সরকারের সময়ে পৃষ্ঠপোষকতাভিত্তিক অর্থনীতি চালু ছিল। এর থেকে অল্পসংখ্যক মানুষ উপকৃত হয়েছে। অর্থনীতিতে গণতন্ত্র ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছিল না। ফলে অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সেই ক্ষতির কারণ খুঁজে সংকটের গভীরে গিয়ে সমাধান নেওয়া হবে।'

তিনি বলেন, 'স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় উন্নতি না হলে দেশের কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি সম্ভব নয়। উন্নয়নের সুফল জনগণের প্রত্যেকের কাছে পৌঁছাতে হবে।'

অনুষ্ঠানের শেষাংশে প্রশ্নোত্তর পর্ব রাখার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'ফ্যাসিস্ট ক্ষমতা হারানোর পর মানুষের মনোজগতে পরিবর্তন এসেছে। সেই পরিবর্তন বুঝতে না পারলে রাজনীতির ভবিষ্যৎ নেই। তাই আমরা এই পর্ব রাখছি। এটি আসলে আমাদের চাকরির ইন্টারভিউ, আর আপনারা আমাদের চাকরি দেবেন।'

তিনি বলেন, 'আগে রাজনীতিবিদরা চাইতেন ব্যবসায়ীরা তাদের কাছে আসুক। আমরা সেই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে চাই। এ জন্য বিভাগীয় শহরগুলোতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এ ধরনের মতবিনিময় করছি। আমরা রুট লেভেলে যাচ্ছি, ব্যবসায়ীদের চাহিদা ও সংকট জানার জন্য।'

'বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দেড় বছরের মধ্যে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। বর্তমানে ব্যবসা করতে ১৯টি সনদ এবং এক থেকে দেড় বছর সময় লাগে। এটি কমিয়ে সরকারি অনুমতি ১০–১৫ দিনের মধ্যে দেওয়া হবে,' বলে যোগ করেন তিনি।

সভায় সভাপতিত্ব করেন ফরিদপুর বিভাগ ব্যবসায়ী ফোরামের সমন্বয়কারী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।

মতবিনিময় সভায় ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী জেলার ব্যবসায়ীরা অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিজিএমইর সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক, করিম গ্রুপের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর মিয়া, বিএস জুট মিলের মালিক জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ রাশেদ আল মাহমুদ, ফরিদপুর চেম্বারের সাবেক সভাপতি আওলাদ হোসেন, মাদারীপুর চেম্বারের সভাপতি লোকমান হোসেন, রাজবাড়ী চেম্বারের সভাপতি ইনামুল করিম, শরীয়তপুর চেম্বারের সহসভাপতি আলাউদ্দিন আল আজাদ, মামুন গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহিন শাহাবুদ্দিন, ফরিদপুর জুট ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান চৌধুরী ফারিয়ান ইউসুফ ও ফরিদপুর চকবাজার বণিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি একেএম কিবরিয়া।