রংপুরের তারাগঞ্জে গণপিটুনিতে নিহত ভ্যানচালক প্রদীপ লাল রবিদাসের (৪৭) বড় ছেলে দুলাল রবিদাসকে (২২) গ্রামপুলিশে চাকরি দেওয়া হয়েছে। তিনি মিঠাপুকুর উপজেলার মিলনপুর ইউনিয়ন পরিষদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

মিলনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান বলেন, 'দুলাল রবিদাস ৩০ অক্টোবর থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় তাকে আমাদের ইউনিয়নে গ্রামপুলিশ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সরকার ঘোষিত বেতনের পাশাপাশি ইউনিয়নে আসা সরকারি সবধরনের সহযোগিতা তার পরিবারকে দেওয়া হবে। নিহত প্রদীপের সন্তানদের পড়াশোনার দিকেও আমরা খেয়াল রাখছি।'

২০২২ সালে এসএসসি পাস করলেও দারিদ্র্যের কারণে দুলাল কলেজে ভর্তি হতে পারেননি। সংসারের হাল ধরতে তিনি দিনমজুরির কাজে নেমেছিলেন। কিন্তু তারাগঞ্জে গণপিটুনিতে বাবার নির্মম মৃত্যু পরিবারের উপর নেমে আনে অন্ধকার। অবশেষে গ্রামপুলিশের চাকরি পেয়ে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন তিনি।

দুলাল রবিদাস বলেন, 'মব সন্ত্রাসে আমার বাবা মারা যাওয়ার পর আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। সংসারে নেমে এসেছিল ভয়াবহ কষ্ট। অনাহারে–অর্ধাহারে থাকতে হচ্ছিল। উপজেলা প্রশাসন আমাকে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এখন ছোট বোন আর ভাইয়ের পড়াশোনাও হবে।'

মিঠাপুকুর উপজেলার মিলনপুর ইউনিয়নের খামার মকিমপুর গ্রামে প্রদীপদের বাড়ি। ছোট্ট এই নিভৃত গ্রামে ছয়টি রবিদাস ও সাতটি সাঁওতাল পরিবার একসঙ্গে বসবাস করে। অন্য পরিবারের নিজস্ব বসতভিটা থাকলেও প্রদীপের পরিবারকে থাকতে হয় অন্যের জমিতে। দুইটি ভাঙাচোরা টিনের ঘরই তাদের আশ্রয়।

একসময় ফুটপাতে জুতা সেলাই করে জীবিকা নির্বাহ করতেন প্রদীপ লাল রবিদাস। ছয় বছর আগে অসুস্থ হয়ে তার একটি পায়ের গোড়ালি কেটে ফেলতে হয়েছিল। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গ্রামবাসীর সহায়তায় একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যান পেয়েছিলেন তিনি। সেই ভ্যান চালিয়েই কোনরকমে সংসার চালাচ্ছিলেন তিনি।

প্রদীপের স্ত্রী দুলালী রবিদাস (৪২) বলেন, 'প্রশাসনের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। আমার ছেলে গ্রামপুলিশের চাকরিটা না পেলে আমাদের বেঁচে থাকা কঠিন হতো।'

গত ৯ আগস্ট রাতে তারাগঞ্জ উপজেলার বুড়িরহাট বটতলায় ভ্যানচোর সন্দেহে প্রদীপ লাল রবিদাস ও তার মামা-শ্বশুর রূপলাল রবিদাসকে আটক করে স্থানীয় কয়েকজন। অল্প সময়ের মধ্যেই মব তৈরি করে দুজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। রূপলাল ছিলেন ফুটপাতের মুচি, আর প্রদীপ ছিলেন ভ্যানচালক। ওই ঘটনার পর মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি হয়।

মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাজমুল আলম জানান, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নিহত প্রদীপ লাল রবিদাসের ছেলে দুলাল রবিদাসকে গ্রামপুলিশের চাকরি দেওয়া হয়েছে। নিহতের পরিবারটির সার্বিক খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। ছোট দুই সন্তানের পড়াশুনার ব্যাপারে সহযোগিতা প্রয়োজন হলে প্রশাসন তা করবে।