বেড়ে গেছে খড়ের দাম, বিপাকে রংপুরের গরুর খামারিরা
খড়ের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন রংপুর অঞ্চলের গরু খামারিরা। মাত্র এক মাস আগেও যেখানে প্রতি কেজি খড় বিক্রি হতো সাত থেকে আট টাকায়, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ থেকে ১২ টাকায়। বিশেষ করে নদী তীরবর্তী ও চর এলাকার কৃষকরা বেশি বিপাকে পড়েছেন, কারণ সাম্প্রতিক বন্যায় প্রাকৃতিক ঘাস আর পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে তারা সম্পূর্ণভাবে খড় ও অন্যান্য পশুখাদ্যের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছেন।গরু পালনকারীরা জানান, খড়ের পাশাপাশি খৈল ও ভুষির দামও বেড়েছে, যা তাদের সীমিত আয়ের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে। প্রতিটি গ...
খড়ের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন রংপুর অঞ্চলের গরু খামারিরা। মাত্র এক মাস আগেও যেখানে প্রতি কেজি খড় বিক্রি হতো সাত থেকে আট টাকায়, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ থেকে ১২ টাকায়।
বিশেষ করে নদী তীরবর্তী ও চর এলাকার কৃষকরা বেশি বিপাকে পড়েছেন, কারণ সাম্প্রতিক বন্যায় প্রাকৃতিক ঘাস আর পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে তারা সম্পূর্ণভাবে খড় ও অন্যান্য পশুখাদ্যের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছেন।
গরু পালনকারীরা জানান, খড়ের পাশাপাশি খৈল ও ভুষির দামও বেড়েছে, যা তাদের সীমিত আয়ের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে। প্রতিটি গরুর জন্য প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচ কেজি খড়ের প্রয়োজন হয়। খড়ই হলো সবচেয়ে সাশ্রয়ী ও অপরিহার্য খাদ্য, বিশেষত দুগ্ধ গাভীর জন্য, কারণ এটি দুধ উৎপাদনে সরাসরি প্রভাব ফেলে।
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তা নদীর চর মহিপুর এলাকার কৃষক মহুবর হোসেন বলেন, 'আমার সাতটি গরু আছে। তাদের জন্য প্রায় ১০ হাজার কেজি খড় মজুত করেছিলাম। কিন্তু সাম্প্রতিক বন্যায় প্রায় তিন হাজার কেজি খড় ভেসে গেছে। এখন খড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় গরুর খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সব ধরনের পশুখাদ্যের দামই বেড়ে গেছে, এখন তা আমাদের সাধ্যের বাইরে।'
লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা নদীর চর কলমাটি এলাকার আবদার আলী বলেন, 'আমার আটটি গরু ছিল, কিন্তু খড়ের সংকটের কারণে গত সপ্তাহে দুটো গরু বিক্রি করতে হয়েছে। আগামী মাসে আমন ধান কাটার পর নতুন খড় পাওয়া গেলে তখন দাম কিছুটা কমতে পারে।'
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ধরলা পাড়ের সারডোব এলাকার কৃষক আব্বাস উদ্দিন জানান, খড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় গরু নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। আশপাশের জমিতে ঘাসও নেই। বাধ্য হয়েই বেশি দামে খড় কিনতে হচ্ছে।
খড় ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি বছর এই সময়টায় খড়ের দাম কিছুটা বাড়ে, তবে এ বছর বন্যার কারণে তা আরও বেড়েছে।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার হাতীবান্ধা হাটের খড় ব্যবসায়ী নূর ইসলাম বলেন, 'আমরা স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি কেজি খড় আট থেকে ১০ টাকায় কিনে ১০ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি করছি। আমন ধান কাটা শুরু হলে দাম কমে প্রতি কেজি পাঁচ থেকে ছয় টাকায় নেমে আসবে।'
কুড়িগ্রামের যাত্রাপুর হাট এলাকার খড় ব্যবসায়ী সালেক মিয়া বলেন, 'চর এলাকায় গরুর সংখ্যা বেড়েছে, তাই খড়ের চাহিদাও আগের চেয়ে অনেক বেশি। খড়ের বিক্রিও অনেক বেড়েছে। দিনাজপুর অঞ্চল থেকে আমরা বেশি দামে খড় কিনে আনছি। পরিবহন খরচও বেড়েছে। তাই বেশি দামে খড় বিক্রি করছি।'
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) সূত্রে জানা গেছে, প্রতি শতাংশ জমি থেকে ১০ থেকে ১২ কেজি খড় পাওয়া যায়। প্রতি বছর রংপুর বিভাগের পাঁচটি জেলায় প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টন খড় উৎপাদন হয়।
পশুসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে, এই পাঁচ জেলায় প্রায় ৪২ লাখ গরু রয়েছে। এর মধ্যে ১৫ থেকে ১৬ লাখের মতো গরু চরাঞ্চলের।
কুড়িগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, 'খড় এখন কৃষকদের কাছে ধানের মতোই মূল্যবান হয়ে উঠেছে। আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে আমন ধান কাটার কাজ শুরু হলে খড়ের দামও ধীরে ধীরে কমে আসবে।'