৩ সাংবাদিককে আইনজীবীদের ‘হেনস্তা’, কারাগারে পাঠাতে চাইলেন বিচারক
আদালত প্রাঙ্গণে তিন সাংবাদিককে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন আইনজীবীর বিরুদ্ধে। পরে ওই তিন সাংবাদিককে কাঠগড়ায় ডেকে নিয়ে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাহ পিয়াস কারাগারে পাঠানোর হুমকি দেন। কিছুক্ষণ পর ক্ষমা চাওয়ার শর্তে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে।ভিডিও ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের মৃত্যুর মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিন ঠিক ছিল আজ। তার বান্ধবী আমাতুল্লাহ বু...
আদালত প্রাঙ্গণে তিন সাংবাদিককে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন আইনজীবীর বিরুদ্ধে। পরে ওই তিন সাংবাদিককে কাঠগড়ায় ডেকে নিয়ে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাহ পিয়াস কারাগারে পাঠানোর হুমকি দেন। কিছুক্ষণ পর ক্ষমা চাওয়ার শর্তে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে।
ভিডিও ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের মৃত্যুর মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিন ঠিক ছিল আজ। তার বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরা আদালতে হাজির হন। আরও ছিলেন ফারদিনের বাবা নুর উদ্দিন রানা। পরে আদালত থেকে বের হন আসামি বুশরা।
তখন বুশরার ভিডিও ফুটেজ নিতে যান কালের কণ্ঠের সাংবাদিক মাসুদ রানা, একুশে টেলিভিশনের রিপোর্টার আরিফুল ইসলাম এবং দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার রিপোর্টার আরিফুল ইসলাম। সেসময় আইনজীবী রেজাউল হক রিয়াজ ও মো. আক্তারুজ্জামান ডালিমসহ কয়েকজন ভিডিও করতে বাধা দেন। সাংবাদিকরা পেশাগত কারণে ভিডিও করার কথা জানালে তারা আরও চড়াও হন। একপর্যায়ে আইনজীবীরা সাংবাদিকদের বিচারকের কাছে নিয়ে যেতে চান। আইনজীবী আক্তারুজ্জামান ডালিম সাংবাদিকের মোবাইল ফোন কেড়ে নেন এবং মামলার বাদী ফারদিনের বাবা নুর উদ্দিন রানাকে দেখে হুমকি দিতে থাকেন।
নুর উদ্দিনের উদ্দেশে আক্তারুজ্জামান ডালিম বলেন, 'আপনি সাংবাদিকদের ডেকে এনেছেন।'
এরপর ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাহ পিয়াস তিন সাংবাদিককে এজলাসে ডেকে নেন। এ সময় আইনজীবী রেজাউল হক রিয়াজ কৌশলে পালিয়ে যান। তখন বিচারক সাংবাদিকদের কাঠগড়ায় দাঁড় করান।
বিচারক সাংবাদিকদের পরিচয় জানতে চেয়ে বলেন, 'আপনারা কোর্টের সামনে হাঙ্গামা করেছেন। এখন ১১টা ৩৮ মিনিট বাজে, আপনাদের কারাগারে পাঠানো হবে। আপনাদের সবার মোবাইল নিয়ে নেওয়া হোক।'
মিনিট দুয়েক পর বিচারক আরও বলেন, 'আপনারা নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলে ছেড়ে দেবো। না হলে কারাগারে যেতে হবে। কোনো ছাড় নেই।'
সাংবাদিকরা ক্ষমা চাইলে তাদের ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি দেন আদালত। রেজাউল হক ও আক্তারুজ্জামান জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
জানতে চাইলে সাংবাদিক মাসুদ রানা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সংবাদ সংগ্রহে গিয়েছিলাম। কিন্তু কয়েকজন আইনজীবী ভিডিও তুলতে বাধা দিয়ে মব সৃষ্টি করে। পরে বিচারক আমাদের তিনজনকে কাঠগড়ায় ডাকেন। আমাদের পরিচয় জেনে বিচারক বলেন, আপনারা বসেন, সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হবে।'
আরেক সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম বলেন, 'আমরা আসামির ভিডিও ধারণ করতে গেলে তাদের আইনজীবীরা চড়াও হন। একজনের মোবাইল কেড়ে নেন। ভিডিও ধারণ করায় বিচারকের কাছে জোর করে আমাদের নিতে চেয়েছেন। আমরা যেতে না চাওয়ায় তারা খুব খারাপ আচরণ করতে থাকেন। এ সময় আরেক আদালতের বিচারক আমাদের এজলাসে ডাকেন। এরপর কাঠগড়ায় যেতে বলেন। বিচারক কোনো আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর হুমকি দেন। কোনো অপরাধ না করেই নিঃশর্তে ক্ষমা চাইতে হয়েছে। বিষয়টি খুব দুঃখজনক।'
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আইনজীবী আক্তারুজ্জামান ডালিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। পরে বিচারক ডেকে সমাধান করে দিয়েছেন।'
আইনজীবী রেজাউল হক রিয়াজ বলেন, 'অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।'
এ বিষয়ে ঢাকার কোর্ট রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি লিটন মাহমুদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাহ পিয়াসের আদালতের বাইরে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিকরা কোর্টে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ব্যাঘাত সৃষ্টি করে এমন কোনো অপেশাদার আচরণ করেননি। তারা শুধু তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছেন।'
তিনি বলেন, 'সেখানে জামাতের আইনজীবীদের দ্বারা হেনস্তার শিকার হন সাংবাদিকরা। ওই সময় আইনজীবীদের হট্টগোলে আদালতে পরিবেশ নষ্ট হয়। যার ভিডিও ফুটেজ রয়েছে।
'এসব বিবেচনায় না নিয়ে সংশ্লিষ্ট কোর্টের বিচারক অতি উৎসাহী হয়ে উল্টো তিন সাংবাদিককে ডেকে নিয়ে জেলে পাঠানোর হুমকি দেন। একজন বিচারকের কাছে এমন আচরণ কাম্য নয়। যা অত্যন্ত নিন্দনীয়', যোগ করেন তিনি।
লিটন মাহমুদ আরও বলেন, 'আমি ওই বিচারকের অপসারণসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই। এ বিষয়ে আমরা প্রধান বিচারপতির কাছে লিখিত অভিযোগ দেবো।'