জনগণ আওয়ামী দোসর নামক ভাইরাসকে লকডাউন দিয়ে রেখেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে নয়াপল্টনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

রিজভী বলেন, 'লকডাউন দেওয়া হয় ভাইরাসের বিরুদ্ধে। কিন্তু তাদের ব্যাপারে লকডাউন তো বাংলাদেশের জনগণের! করোনাভাইরাস যেমন মানুষের শ্বাসরুদ্ধ করে দিত, আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ছিল জাতির শ্বাসরুদ্ধ করে দেওয়া একটি রাজনৈতিক দল। যারা জোর করে ক্ষমতা আঁকড়ে রেখেছিল। জনগণ তো লকডাউন দিয়ে রেখেছে এই আওয়ামী দোসর নামক ভাইরাসদেরকে। আর আপনারা উল্টো লকডাউন দিচ্ছেন এ দেশে! তাহলে আপনারা যদি চলেই আসেন কোনোভাবে, তাহলে বাংলাদেশকে আবার সেই পরিস্থিতির শিকার হতে হবে। কন্ঠের স্বাধীনতা থেকে শুরু করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি, কেউ কোনো কিছু করতে পারবে না।'

'যেভাবে তারা দেশ চালিয়েছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো শূন্য করে দিয়েছেন, রাজকোষ শূন্য করে দিয়েছেন, শূন্য করে দিয়ে বড় বড় প্রজেক্টের নামে টাকা পাচার করেছেন—এই স্বপ্নে বিভোর হয়ে তারা ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের জন্য লকডাউন নামক একটি অদ্ভুত ফ্রেজ ব্যবহার করে সেই কর্মসূচি দিচ্ছেন এবং তার জন্য আগুন ছড়িয়ে পড়ছে,' যোগ করেন তিনি।

রিজভী বলেন, 'বিএনপি বা সমমান রাজনৈতিক দলগুলো যখন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়েছে, আমরা বলেছিলাম এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন জায়গায় যে আগুন লাগানো হয়েছে বাসে এবং আগুনে পড়ানো হয়েছে, এটা রাষ্ট্র কর্তৃক করা হয়েছে, রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে করা হয়েছে। তার কিছু নজির তখনই বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফুটে উঠেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের ছেলেরা ফেসবুকে পোস্ট করেছে কাজ করে কারা, আর মানে নাম হয় কাদের! আমরা লাগালাম আগুন, আর দোষ পড়ছে...কৌশলটা খুব ভালো। এখনো তার ডকুমেন্ট আছে।'

তিনি আরও বলেন, 'আগুনে মানুষ পড়ানোর এই সমস্ত কালচার যে আওয়ামী লীগের, সেটার আবার আমরা প্রমাণ পাচ্ছি এখন। তখন তো রাষ্ট্র ক্ষমতাকে ব্যবহার করে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে তারা অপপ্রচার চালিয়ে গেছে, কিন্তু ওরাই যে করেছে তার প্রমাণ এখন বিভিন্ন বাসে আগুন দেওয়া। গাজীপুর, ঢাকা এবং সারা বাংলাদেশের কয়েকটি জায়গায় তারা আগুন দিচ্ছে এবং আগুনে মানুষ পুড়িয়ে মারছে।'

'বিএনপি এবং আন্দোলনকামী মানুষের তখন আরও ভয়াবহ অবস্থা। একদিকে পুলিশ, একদিকে র‌্যাব, একদিকে আয়নাঘর, একদিকে টর্চার-অত্যাচার, পাড়ায়-মহল্লায় বসে থাকে যুবলীগ-ছাত্রলীগ, তার মধ্যেও বুক উঁচিয়ে যারা গণতন্ত্র নিশ্চিত করার জন্য সংগ্রাম করেছে, তারা তো মহাবিপ্লবী! তারা তো আদর্শবাদী সৈনিক। আদর্শবাদী সৈনিকরা কোনোদিন সাধারণ মানুষের ক্ষতি হয়, সাধারণ মানুষ পুড়ে মরবে—এই কাজ আদর্শবাদীরা করেনি,' যোগ করেন তিনি।

এই বিএনপি নেতা আরও বলেন, 'যারা গুপ্তঘাতক, যারা দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় জনগণের টাকা লুট করে, নিজের এলাকায় যারা একেকটা সাদ্দাদের বেহেশত তৈরি করেছে, তাদের তো জনগণের প্রতি কোনো দরদ থাকবে না। ওই সময় লুটের যে আনন্দ, ভোগের যে আনন্দ, বিলাসের যে আনন্দ, এই ভোগ-বিলাসের আনন্দের কথা শেখ হাসিনা ভুলতে পারছে না। আওয়ামী নেতারা ভুলতে পারছে না। এই কারণে তারা অবৈধ সন্ত্রাসী পন্থা অবলম্বন করে একেবারে চোরাগোপ্তাভাবে জনগণের ওপর আক্রমণ করছে। তার নমুনা আজকে দুতিন দিন ধরে আমরা দেখছি।'

কখনোই কোনো ফ্যাসিস্ট পরাজিত শক্তি আর ফিরে আসে না উল্লেখ করে রিজভী বলেন, 'গণতন্ত্রের জন্য যারা লড়াই করেছেন, তাদেরকে অবশ্যই গণভোট বলুন আর যেটাই বলুন, একটা অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন করে জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।'