বাংলাদেশি বৌদ্ধদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু শাসনশোভন মহাসদ্ধর্মজ্যোতিকাধ্বজ সংঘরাজ ড. জ্ঞানশ্রী মহাথেরো মারা গেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে চট্টগ্রাম নগরের এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন তিনি।

সংঘরাজের একান্ত চিকিৎসক ও বৌদ্ধ গবেষক অধ্যাপক ডা. প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া বলেন, 'আমাদের কিংবদন্তী বৌদ্ধ মনীষা ও সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু প্রয়াত সংঘরাজ ড. জ্ঞানশ্রী মহাথেরো ভান্তের মরদেহ রাউজানের বিনাজুরী শ্মশান বিহারে নিয়ে যাওয়া হবে আজ রাতে। শুক্রবার ভেষজ প্রক্রিয়ায় তার মরদেহ সংরক্ষণ করে রাখা হবে।'

১৯২৫ সালের ১৮ নভেম্বর তিনি রাউজানের উত্তর গুজরা (ডোমখালী) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা প্রেম লাল বড়ুয়া ও মা মেনেকা রাণী বড়ুয়া।

১৯৪৪ সালে পশ্চিম বিনাজুরী গ্রামের কীর্তিমান সংঘ মনীষা সারানন্দ মহাস্থবিরের সার্বিক সহযোগিতায় উপসংঘরাজ গুণালংকার মহাস্থবিরের কাছে হাটহাজারীর জোবরা গ্রামে তিনি শ্রামণ্য ধর্মে দীক্ষা নেন।

পাঁচ বছর শ্রামণ্য ধর্মের দীক্ষা শেষে ১৯৪৯ সালে রাজানগর থেরবাদ সদ্ধর্মের সূতিকাগার পাষাণ সীমায় রাজগুরু ধর্মরত্ন মহাস্থবিরের উপাধ্যায়ত্তে তিনি দুর্লভ উপসম্পদা লাভ করেন।

দীর্ঘ ৮০ বছরের ভিক্ষুত্ব জীবনে বৃহত্তর বৌদ্ধ সমাজকে তিনি অকাতরে সেবা দিয়ে গেছেন। অসংখ্য বৌদ্ধ বিহার, অনাথালয় ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। তার কর্ম ও মানবসেবার স্বীকৃতিস্বরূপ দেশ-বিদেশে বহু সম্মাননা ও খেতাব পেয়েছেন এই মহাস্থবির।

১৯৮১ সালে থাইল্যান্ড থেকে 'শাসনশোভন জ্ঞানভানক' উপাধি লাভ করেন তিনি। ২০০৪ সালে বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভা তাকে 'উপ সংঘরাজ' হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।

পরবর্তীতে, ২০০৬ সালে বার্মা সরকার তাকে 'মহাসম্মজ্যোতিকাধ্বজ' উপাধিতে ভূষিত করে এবং ২০০৭ সালে থাইল্যান্ডের মহাচুল্লালংকার বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে।

২০২০ সালের ২০ মে তিনি সংঘরাজ ভিক্ষু সহাসভার সর্বোচ্চ সম্মাননা 'সংঘরাজ' উপাধিতে ভূষিত হন। ২০২২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সমাজসেবায় অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদক প্রদান করে।

চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, জয়পুরহাটসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় অন্তত ৩০টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ভিক্ষু ট্রেনিং সেন্টার ও অনাথ আশ্রম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি বৌদ্ধ সমাজে বিশেষভাবে সমাদৃত হয়েছেন।