কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের লকডাউন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গত ৩৬ ঘণ্টায় ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এসব অভিযানে ককটেল, পেট্রোল ও বিস্ফোরক দ্রব্যও উদ্ধার করা হয়েছে।

আজ বুধবার বিকেলে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তারেক আল মেহেদী দ্য ডেইলি স্টারকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে বিশেষ অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অন্তত ২৯ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, 'যেকোনো ধরনের নাশকতা ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে জেলাজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। কয়েকটি স্থানে তল্লাশি চৌকি স্থাপনসহ টহল কার্যক্রমও জোরদার করা হয়েছে।'

জেলা পুলিশের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বুধবার ভোর সোয়া ৪টার দিকে আড়াইহাজার পৌরসভার কৃষ্ণপুরা-গাজীপুরা সড়কে এক অভিযানে মহিলা লীগের এক নেত্রীসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে ককটেল, পেট্রোল ও বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—নরসিংদীর কাঠালিয়া ইউনিয়ন মহিলা লীগের সভাপতি বীনা আক্তার (৫৬), মাধবদীর আমিনুল ইসলাম (২০), আপন (১৯), অনিক (১৯), আড়াইহাজারের নিলয় (১৯), নাজমুল (১৯), কল্যান্দীর ইয়ামিন ইসলাম (২০) ও সালমান (১৯) ।

পুলিশ জানায়, বীনা আক্তার নরসিংদীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সংঘটিত তিনটি হত্যা মামলার আসামি। গ্রেপ্তারকৃতরা আওয়ামী লীগের ১৩ নভেম্বরের লকডাউন কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একত্রিত হয়ে পেট্রোল, ককটেল, টায়ার, গ্যাসলাইট ও লাঠিসোটাসহ নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তারা সরকারবিরোধী স্লোগান দিচ্ছিল এবং সরকারি স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করছিল।

মঙ্গলবার রাতে ফতুল্লায় পৃথক অভিযানে আরও ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলেন—ভুঁইগড় এলাকার মোহাম্মদ নিজাম ওরফে সাউদ (৬০), ধর্মগঞ্জের সাইফুল ইসলাম (৪২), আবু বক্কর সিদ্দিক (৪৫), পিলকুনির সানি মোল্লা (২৪), তল্লার মিজানুর রহমান ফাহিম ওরফে সুইচ-গিয়ার ফাহিম (৩০) এবং পশ্চিম তল্লার আকাশ (২৭)।

ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে আগের মামলাও রয়েছে।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি শাহীনূর আলম জানান, বিশেষ অভিযানে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগের চারজন সক্রিয় কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন—স্বেচ্ছাসেবক লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জিয়াউল হক জিয়া (৫৪), যুবলীগের কর্মী মো. ভোলা মেম্বার (৫৪), মাইন উদ্দিন (২৪) ও রবিন (৩৫) । বুধবার দুপুরে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

রূপগঞ্জ উপজেলায়ও পুলিশের অভিযানে আওয়ামী লীগের ৭ জন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন—মোস্তফা সারোয়ার নিশাত, রুহুল আমিন নেভী, জাহিদুল হাসান, মো. সাইফুল ইসলাম, মনি শিকদার, মো. রায়হান ও মো. রফিকুল।

রূপগঞ্জ থানার ওসি তরিকুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা ঢাকায় লকডাউন কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার ভোরে বরপা ও পূর্বাচল এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং যেকোনো ধরনের নাশকতা রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।