পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে মারামারির ঘটনায় সালিশের নামে দুই শিক্ষার্থীসহ পাঁচ তরুণকে 'বখাটে' আখ্যা দিয়ে মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীদের পরিবারের অভিযোগ, স্থানীয় ইউপি সদস্য রেশাদ খলিফার নির্দেশে তার সামনেই রোববার সকালে এ 'শাস্তি' দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় আজ সোমবার দুপুরে রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিব দাশ পুরকায়স্থ তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামানকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের মধ্যচতলাখালী গ্রামের মনির গোলদার ও মোজাম্মেল মৃধার মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে শুক্রবার তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এর জেরে শনিবার রাতে মনিরের ছেলে রাব্বি ও মোজাম্মেলের ছেলে রিয়ানের মধ্যেও মারামারি হয়।

রিয়ানের বাবা মোজাম্মেল মৃধা বিষয়টি ইউপি সদস্য রেশাদ খলিফাকে (৯ নম্বর ওয়ার্ড) জানান। পরদিন রোববার সকালে খুতিরবাজার এলাকায় ইউপি সদস্যের উপস্থিতিতে সালিশ বসে। সেখানে ওই পাঁচ তরুণকে 'বখাটে' আখ্যা দিয়ে মাথা ন্যাড়া করার সিদ্ধান্ত হয়। পরে বাজার থেকে নরসুন্দর ডেকে এনে রেশাদ খলিফার উপস্থিতিতেই তাদের মাথা ন্যাড়া করা হয়।

ভুক্তভোগী অন্য তিনজন হলেন—শাকিল (১৯), নয়ন সরদার (১৮) ও অপ্রাপ্তবয়স্ক এক কিশোর।

এ ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভ ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ভুক্তভোগী কয়েকটি পরিবার 'অপমানে' মুখ লুকাচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, রাব্বি ও রিয়ানের মারামারি থামাতে গিয়েছিলেন অন্য তিনজন। কিন্তু সালিসিতে তাদের কথা শোনা হয়নি। ইউপি সদস্য প্রভাবশালী হওয়ায় অনেকে ভয়ে মুখ খুলছেন না।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউপি সদস্য রেশাদ খলিফা। তিনি বলেন, 'যা হয়েছে দুই পরিবারের লোকজন করেছেন। আমি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই। তারা বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গিয়েছেন। আমি এর সঙ্গে জড়িত নই।'

গ্রাম আদালতের রাঙ্গাবালী উপজেলা কো-অর্ডিনেটর মো. ইমাম হোসেন সায়েম বলেন, 'ইউনিয়ন পরিষদের বাইরে সালিশ করার সুযোগ নেই। আর সালিশের নামে যা হয়েছে তা সম্পূর্ণ আইনবহির্ভূত। জনপ্রতিনিধির এমন ক্ষমতা নেই।'

রাঙ্গাবালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীম হাওলাদার বলেন, 'বিষয়টি শুনেছি। কোনো পক্ষ থেকে অভিযোগ আসেনি। তবে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।'

ইউএনও রাজিব দাশ পুরকায়স্থ বলেন, 'তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'